বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছেঃ শিক্ষার মান বাড়ছে কি?

সর্বশেষ আরো ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যের ভিত্তিতে সংখ্যাটি বর্তমানে ৪২।

এছাড়া রয়েছে ১০৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যার মধ্যে কয়েকটি এখনো একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে নি, কয়েকটি অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষা। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে অসংখ্য কলেজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাটা বাড়লেও শিক্ষার গুনগত মান বাড়ছে কী? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সাথে প্রয়োজন শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করা। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু অপ্রিয় সত্য হল, আমাদের শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়াটাই দুর্নীতিগ্রস্ত।

শিক্ষকের গুনগত মানের চেয়ে এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয় রাজনৈতিক ক্ষমতা, টাকা ও স্বজনপ্রীতি কে। তাছাড়া শুধুমাত্র একটি ভাইভার মাধ্যমেই প্রকৃত যোগ্য শিক্ষক বাঁচাই করা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে সম্প্রতি ইউজিসি শিক্ষিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে। একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা ও ডেমু ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করা যায়, এতে করে কিছু হলেও প্রকৃত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ হবে।

বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা একাডেমিক ক্লাসের চেয়ে রাজনীতিতে বেশী সময় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে শিক্ষার মান ব্যহত হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে সেশনজট। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটে জর্জরিত।

এছাড়া রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লাস রুমের অভাব। অপরিকল্পিত উন্নয়ন।  গবেষণাগারের অভাব। গবেষণাগার থাকলে এতে বাজেট থাকে প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। লাইব্রেরীতে থাকে থাকে না পরিমাণমত বই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কনসার্টের জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা হয়, কিন্তু একটা ছাত্র রোবট আবিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান চাইলে নানা ধরণের অজুহাত দেখিয়ে কোন ধরণের সহায়তা করা হয় না। যে পরিমাণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়, সে তুলনায় বিজ্ঞান ফেস্ট, রোবটিক্সের সংখ্যাটা খুবই নগন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয় না যুবকদের উদ্যোক্তা বানানোর কোন উদ্যোগ। অথচ সরকারের ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ হওয়ার অন্যতম সোপান হচ্ছে উদ্যোক্তারা।

তাই সরকারের উচিত অপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা না বাড়িয়ে শিক্ষার গুনগত  মান বাড়ানো। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ করা, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ করা, শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা,  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সর্বদা তদারকি করা, ভৌত অবকাঠামোর সাথে সাথে গবেষণার মান বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া, শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ বাড়ানো প্রভৃতি।

না হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বাড়বে। এমনিতেই লক্ষাধিক শিক্ষিত বেকার দেশে অবস্থান করছে। হণ্যে হয়ে একটা চাকরীর জন্য ঘুরছে। তাই আর বিশ্ববিদ্যালয়  না বাড়িয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করুন, মানসম্মত শিক্ষা দিন, শিক্ষার্থীরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।


সাইফুল ইসলাম রাসেল,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

Related Posts

Subscribe Our Newsletter