একজন কাদির মোল্লা


বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যেই কাদির মোল্লা স্যারের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম। বাড়ির সাথেই মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন এর ভবন, যেখানে উনি সবার সাথে সাক্ষাত করেন।

ভবনের হলরুমে চোখ পড়তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পুরা হল রুমটা মানুষে ভর্তি। এত মানুষ, সবাই সাহায্যপ্রার্থী। এত মানুষের মধ্যে তিনি আমাদের ফারুকের জন্য কতটা সহায়তা করবেন তা ভেবে মন উশখুশ করছিল।

সময়ানুযায়ী তিনি এসে হাজির। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি, উনি যে কাদির মোল্লা। উনার যত নাম শুনেছি, ভেবেছি গেটআপ হবে স্যুটেড ব্যুটেড, কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, লুঙ্গি পড়ে একজন বয়স্ক মানুষ আমাদের সামনে এসে বসল। চলাফেরা, কথাবার্তায় নেই আভিজাত্যের চাপ। একদম সাদামাটা। কথাবার্তায় রসিক টাইপের। ছিমছাম।

বসার সাথে সাথেই একজন করে যেতে লাগল। একটু দূরে বসে সব লক্ষ করছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। একটা মানুষকে তিনি খালি হাতে ফেরান নি। প্রত্যেকটা মানুষকে ২ মিনিটের জিজ্ঞাসায় নগদ টাকা দিচ্ছিলেন।

বাংলাদেশের কোন জেলার মানুষ তার কাছে সাহায্যের আসে নি?? প্রায় সব জেলার মানুষের সাক্ষাত পেলাম।

আমাদের একটু আগে আমাদের কুমিল্লারই এক আপু ও তার বাবা গেলেন। আপুটি ময়নামতি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য উনার কাছ থেকে ৬০৩০০০ টাকা (ছয় লক্ষ তিন হাজার) ঋণ নিয়েছিলেন। ডাক্তারি পাস করে ঐ আপু আজকে উনার সাথে দেখা করতে আসছেন। উনি বললেন, "আমার টাকা তোমার ফেরত দিতে হবে না। তবে তুমি গরিব মানুষের কাছ থেকে কোন ফি নিতে পারবে না। এটাই আমার পাওয়া"

একটা মানুষ এত মহান কিভাবে হয়? দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। আল্লাহ উনাকে সম্পদ দিয়েছেন, মনও দিয়েছেন।

এর আগে একটা মহিলা রোগী ১৫০০০ টাকা নগদ ক্যাশ দিয়ে মজা করে বললেন, "টাকা ঔষধ কিনবা, তোমরা তো টাকা পাইলেই এখন মোবাইল কিনো"।

সবার সাথে এভাবেই রসিকতা, সাধারণ কথাবার্তা বলে পরিবেশ হালকা রাখছিলেম। আচরণে কোন গাম্ভীর্য ছিল না, মনে হয় যেন সবাইকে আগে থেকেই ছিনেন।

একটু পর আমাদের ডাকলেন। আমাদের সমস্যা শুনলেন। দু/একটা সাধারণ কথা জিজ্ঞেস করলেন। ফারুকের বাবার সাথে ও আমাদের ভার্সিটি নিয়ে একটু খুনসুটি করলেন। পরে বললেন, একজনের জন্য আমার ফাউন্ডেশনের সর্বোচ্চ বাজেট ১০ লক্ষ টাকা। আমি তোমাদের বাজেটের সম্পূর্ণ ১০ লক্ষ টাকা দিব। এখন ফারুককে ভারতে নিয়ে যাও, চিকিৎসা শুরু কর। কথার ভাবে বুঝলাম, প্রয়োজনে আমরা আবার তার কাছে যেতে পারব।

মাত্র ৩/৪ মিনিটের কথায় ১০ লক্ষ টাকা কেউ এভাবে দিতে পারে,, আজকেই প্রথম দেখলাম। উনার সাথে ছবি তুলতে চাইলাম। রাজি হলেন না, উনি প্রচারে বিশ্বাসী না।

সর্বোপরি, এই সামান্য সময়টুকুতে উনাকে যতটুকু দেখেছি, উনার মত ২য়টা বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না, যারা উনার সংস্পর্শে গিয়েছেন তারা বুঝতে পারবেন। এমন মানুষ লাখে ১জনও পাওয়া যায় না। দেশে এমন মানুষের দরকার, খুব দরকার।

Newer Oldest

Related Posts

Subscribe Our Newsletter